ল্যাপটপ কেনার পূর্বে একটি ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় কি বা একটি ভালো ল্যাপটপের
বৈশিষ্ট কি, সেটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অজ্ঞতা বশত ল্যাপটপ কিনতে গেলে
আপনার কষ্টে উপার্জিত টাকা নষ্ট হতে পারে! আপনি যদি ল্যাপটপ সম্পর্কে একটি
কমপ্লিট বাইয়িং গাইড চান তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় চলে এসেছেন। কারণ এটি কোন স্পনশর
পোস্ট নয়। কাজেই এই আর্টিকেল পড়লে আপনি একটি ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় সহজে জেনে
নিতে পারবেন।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, একজন সাধারণ মানুষের ল্যাপটপ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ
ধারনা না থাকার কারনে কম্পিউটার দোকানের সেলসম্যানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে
ল্যাপটপ কিনে থাকে। এ ক্ষেত্রে সেলসম্যান আপনার সুবিধার বিষয়টি বিবেচনা না করে
তাদের ব্যবসার লাভের বিষয় বিবেচনা করে আপনার কাছে ল্যাপটপ বিক্রি করে। এ ধরনের
ল্যাপটপ কেনার কিছু দিন পর যখন ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে থাকে তখন
ল্যাপটপ নিয়ে হতাশা ও চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়।
[post_ads]
আপনি যদি একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে চান, তাহলে এই পোস্ট থেকে ল্যাপটপ কেনার আগে যে
সকল বিষয় জানা প্রয়োজন, সে সকল বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিজে নিজে
একটি ভালোমানের ল্যাপটপ বাছাই করে পছন্দমত ল্যাপটপ কিনতে পারবেন। তাছাড়া এই
পোস্টটি পড়লে আপনি একটি পুরাতন (সেকেন্ড হ্যান্ড) ল্যাপটপ কিনার ক্ষেত্রে
ল্যাপটপের ভালো দিকগুলো নিজে নিজে বুঝতে পারবেন।
ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় কি?
একটি নতুন ল্যাপটপ কেনার সময় ল্যাপটপ এর প্রসেসর, র্যাম, রোম, ডিসপ্লে, ব্যাটারি
ও ল্যাপটপের সাইজ সহ আনুষাঙ্গিক আরো কিছু বিষয় বিবেচনা করে ভালোমানের ল্যাপটপ
নির্বাচন করতে হয়। ল্যাপটপ এর এই সহজ কয়েকটি পার্টস (হার্ডওয়্যার) সম্পর্কে আপনার
পরিষ্কার ধারনা থাকলে একটি ল্যাপটপ কেনার সময় আপনাকে কারো নিকট হতে পরামর্শ নিতে
হবে না।
সাধারণত একটি ল্যাপটপ কেনার সময় Core i3 প্রসেসর নিব নাকি Core i5 নিব নাকি Core
i7 নেব, এই প্রশ্ন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়। আবার র্যামের ক্ষেত্রে কমন প্রশ্ন
হচ্ছে ৪ জিবি নিলে ভালো হবে নাকি ৮ জিবি নিলে ভালো হবে? আমরা এই পোস্টের মাধ্যমে
আপনার সকল দ্বিধাদন্দ পরিষ্কার করে দেব।
একটি ভালো ল্যাপটপ চেনার সহজ উপায় হিসেবে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়-
- প্রসেসর/সিপিইউ
- র্যাম (RAM)
- রোম (হার্ড ডিস্ক)
- ডিসপ্লে
- মাদারবোর্ড
- ল্যাপটপ সাইজ এবং ওয়েইট
- ল্যাপটপ ডিজাইন
- অপারেটিং সিস্টেম (সফটওয়্যার)
- ল্যাপটপ ব্রান্ড
কেন ল্যাপটপ কিনবেন?
একটি ভালোমানের ল্যাপটপ এর বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা করার পূর্বে আপনি কেন একটি
ল্যাপটপ কিনতে চাইছেন সেটা নিয়ে আলোচনা করা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি
মানসম্মত ল্যাপটপ কেনার জন্য বর্তমানে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরছ করতে হয়।
কাজেই আপনি কেন একটি ল্যাপটপ কিনতে চাইছেন সেটা আপনাকে নিজে নিজে ঠিক করে নিতে
হবে।
[post_ads_2]
আপনি যদি শুধুমাত্র অন্যের দেখাদেখি বা আপনার বন্ধু বান্ধবদের দেখানোর জন্য
ল্যাপটপ কিনতে চান, তাহলে আমি আপনাকে বলব আপনার ল্যাপটপ কেনার কোন প্রয়োজন নেই।
কারণ কাজ ছাড়া একটি ল্যাপটপ কিনে টাকা নষ্ট করাটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
তাছাড়া আপনি শুধুমাত্র গান দেখার জন্য এবং ইন্টারনেট ব্রাউজিং বা ইউটিউবে ভিডিও
দেখার জন্য কিংবা ফেসবুক ব্যবহার করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চাইলে, আমি আপনাকে আবার
বলছি আপনার ল্যাপটপ কেনার প্রয়োজন নেই। কারণ গান শুনা, ভিডিও গান দেখা, ইন্টারনেট
ব্রাউজিং করা বা ইউটিউবে ভিডিও দেখার সকল কাজ এখন হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে
অনায়াসে করা যায়।
সুতরাং প্রয়োজন ছাড়া ল্যাপটপ না কিনে ১০/১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি স্মার্টফোন কিনে
নেওয়ার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি। তারপরেও প্রয়োজন ছাড়া
শুধুমাত্র অন্যকে দেখানোর জন্য ল্যাপটপ কিনে টাকা নষ্ট করতে চাইলে চুড়ান্ত
সিদ্ধান্ত আপনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়।
এগুলো পড়ুন—
কোন ধরনের ল্যাপটপ কিনবেন?
আপনি কোন ধরনের ল্যাপটপ কিনবেন এবং কত দামের ল্যাপটপ কিনবেন, সেটা আপনার কাজের
উপর ডিপেন্ড করবে। আপনি যদি শুধুমাত্র অফিসিয়াল কাজের জন্য এমএস ওয়ার্ড, এক্সেল,
পাওয়ার পয়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং গান শুনা ও ভিডিও দেখার মত হালকা পাতলা
কাজ করার জন্য ল্যাপটপ কিনতে চান, তাহলে আপনাকে এক ধরনের ল্যাপটপ কিনতে হবে।
আবার আপনি উপরোক্ত কাজগুলোর পাশাপাশি ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং ও হালকা পাতলা গেম
খেলা সহ আনুষাঙ্গিক কিছু ভারি কাজ করতে চাইলে আপনি আরেক ধরনের ল্যাপটপ কিনতে হবে।
কারণ ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং ও হালকা পাতলা গেম একটি নরমাল ল্যাপটপ দিয়ে করা
যায় না।
তাছাড়া আপনি উপরের সবগুলো কাজের পাশাপাশি ভারি ভারি গেম, বড় বড় গ্রাফিক্স এর কাজ
করার পশাপাশি ভারি সফটওয়ার দিয়ে ভিডিও এডিটিং করতে চাইলে আপনাকে সবচাইতে
ভালোমানের ল্যাপটপ কিনতে হবে। সেই সাথে এক দিনে ১০/১২ ঘন্টা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে
চাইলেও আপনাকে একটি ভালোমানের ল্যাপটপ কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার বাজেট
অনেক বেশি হবে।
এগুলো পড়ুন—
একটি ভালো ল্যাপটপের বৈশিষ্ট কি কি?
একটি ভালোমানের ল্যাপটপ চেনার জন্য ল্যাপটপের অনেক ধরনের বৈশিষ্ট বিবেচনা করতে
হয়। কিন্তু আপনি সকল ধরনের বৈশিষ্ট বিবেচনা করে কখনো ল্যাপটপ নির্বাচন করতে
পারবেন না। তাছাড়া আমরা এখানে সবগুলো বৈশিষ্ট নিয়ে আলোচনা করলে ভালোমানের ল্যাপটপ
বাছাই করার ক্ষেত্রে আপনি অনেকাংশে কনফিউস হয়ে যাবেন।
সে জন্য একটি ভালোমানের ল্যাপটপ চেনার জন্য ল্যাপটপের যে বৈশিষ্টগুলো সবচাইতে
গুরুত্বপূর্ণ এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় কেবলমাত্র সেই বৈশিষ্ট নিয়ে এখানে আলোচনা করব।
নিচের সকল বিষয় সম্পর্কে আপনি পূর্ণাঙ্গ আইডিয়া নিতে পারলে খুব সহজে নিজে নিজে
একটি ভালোমানের ল্যাপটপ কিনতে পারবেন।
১। প্রসেসর (সিপিইউ)
প্রসেসর বা সিপিইউ ল্যাপটপ এর খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি হার্ডওয়্যার। একজন ক্রেতা
ল্যাপটপ কেনার সময় ল্যাপটপের প্রসেসর নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হয়। কারণ
বাজারে এত এত কোম্পানির প্রসেসর এবং বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রসেসর রয়েছে, যাতে কোন
ধরনের প্রসেসর ল্যাপটপের জন্য ভালো হবে, সেটা একজন কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তি
সহজে বুঝে উঠতে পারেন না।
সাধারণত কম্পিউটার প্রসেসর এর ক্ষেত্রে মার্কেটে দুই ধরনের কোম্পানি সবচাইতে
জনপ্রিয়। একটি হচ্ছে AMD এবং অন্যটি হচ্ছে Intel কোম্পানি। Intel এর সাথে আমরা
সবাই কম বেশি পরিচিত কিন্তু AMD প্রসেসর সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি AMD প্রসেসর কিনবেন, নাকি Intel এর প্রসেসর কিনবেন? আসলে
আপনার বাজেটের উপর নির্ভর করবে যে, আপনার জন্য AMD প্রসেসর ভালো হবে নাকি Intel
এর প্রসেসর ভালো হবে?
আপনার বাজেট যদি ৩০ হাজার টাকার কম হয় তাহলে আপনার জন্য AMD এর প্রসেসর সবচাইতে
ভালো হবে। কারণ ৩০ হাজার টাকার কম দামে Intel প্রসেসর এর ল্যাপটপ কিনলে সেই
ল্যাপটপ থেকে আপনি ভালোমানের পারফর্মেন্স পাবেন না। কারণ ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কেনা
AMD প্রসেসর যুক্ত ল্যাপটপ ৩০ হাজার টাকার Intel প্রসেসর এর চাইতে অনেক ভালো
পরফর্মেন্স দেবে। সুতরাং ৩০ হাজার টাকার
কম মূল্যে ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে AMD
প্রসেসর আপনার জন্য বেটার হবে।
পক্ষান্তরে আপনার বাজেট ৩৫ হাজার টাকার বেশি হলে আপনি অনায়াসে Intel এর প্রসেসর
কিনতে পারেন। কারণ ৩৫ টাকার বেশি বাজেটের Intel প্রসেসর যুক্ত ল্যাপটপ থেকে আপনি
AMD এর চাইতে অনেক ভালো পারফর্মেন্স পাবেন। কারণ Intel এর প্রসেসর তুলনামূলকভাবে
অন্য সকল প্রসেসর এর চাইতে কম শক্তি অপচয় করে।
কোন ধরনের প্রসেসর কিনবেন (Core i3 নাকি Core i5)?
নতুন ও পুরাতন ল্যাপটপ কেনার সময় একজন ক্রেতাকে এখানে আরো বড় সমস্যার সম্মুখিন
হতে হয়। কারণ বর্তমান মার্কেটে Pentium, Dual Core, Core i3, Core i5, Core i7
এবং সর্বশেষ Core i9 প্রসেসর এর ল্যাপটপ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে কোনটি কার জন্য
পারফেক্ট হবে সেটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্রেতাদের হেজিটেশনে পড়তে হয়। কোনটি আপনার
জন্য পারফেক্ট হবে সেটি জানার আগে Core কি, সেটা জেনে নিলে আপনার জন্য Core i3
নাকি Core i5 ভালো হবে, তা নিজে নিজে বুঝতে পারবেন।
কোর কি (Core)?
Core হচ্ছে কম্পিউটার প্রসেসর এর শক্তি। একটি প্রসেসর এ যত বেশি Core থাকে সেই
প্রসেসর তত শক্তিশালী হয় এবং কম্পিউটার দ্রুত কাজ করে। তবে এখানে Core i3 মানে
৩টি Core নয় বা Core i5 মানে ৫টি Core নয়। এগুলো হচ্ছে প্রসেসর এর এক একটি
ভার্সন। সাধারণত Core i3 প্রসেসরে ২টি Core থাকে এবং Core i5 প্রসেসরে ৪টি Core
থাকে। Core বিষয়টি বুঝানোর জন্য আমি একটি উদাহরনের মাধ্যমে বিষয়টি পরিষ্কার করছি।
উদাহরণঃ ধরুন এক প্লেট ভাত খাওয়ার জন্য আপনাকে দেওয়া হল। আপনি এক প্লেট ভাত খেতে
কমপক্ষে ২ মিনিট সময় নিলেন। পক্ষান্তরে এক প্লেট ভাত ২ জনকে খেতে দেওয়া হলে, তারা
দু’জন আপনার চাইতে আরো দ্রুত খেতে পারবে। ঠিক একইভাবে প্রসেসর এর চারটি কোর দুটি
কোর চাইতে যেকোন কাজ দ্রুত করতে পারে। সে জন্য বেশি কোর এর প্রসেসর সম্পন্ন
ল্যাপটপ কিনলে ল্যাপটপ দ্রুত গতির হয়।
উপরের উদাহরণ ও বিশ্লেষণ থেকে অবশ্যই আপনার বুঝতে বাকি নেই যে, আপনার জন্য কোন
ধরনের প্রসেসর ভালো হবে। আপনি যদি শুধুমাত্র অফিসিয়াল কাজের জন্য এমএস ওয়ার্ড,
এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, ইন্টারনেট ব্রাউজিং এবং গান শুনা ও ভিডিও দেখার মত হালকা
পাতলা কাজ করেন, তাহলে Core i3 প্রসেসর এর ল্যাপটপ কিনতে পারেন।
পক্ষান্তরে ফটো এডিটিং, ভিডিও এডিটিং ও হালকা পাতলা গেম খেলা সহ আনুষাঙ্গিক কিছু
ভারি কাজ করতে চাইলে Core i5 ল্যাপটপ কিনার জন্য আমি সাজেস্ট করব। সেই সাথে আরো
ভারি ভারি কাজ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই Core i7 কিংবা Core i9 ল্যাপটপ কিনতে হবে।
তবে যত বেশি কোর সমৃদ্ধ ল্যাপটপ কিনবেন, আপনার বাজেট তত বেশি হবে।
প্রসেসর এর জেনারেশন কি?
কম্পিউটার প্রসেসর এর ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় হচ্ছে জেনারেশন। প্রায় সময় আমরা 7th, 8th, 9th, 10th, 11th ও 12th জেনারেশন এর ল্যাপটপ শুনে থাকি। প্রসেসর এর জেনারেশন যত
বেশি হয় প্রসেসর তত কম শক্তি অপচয় করে এবং প্রসেসর তত বেশি শক্তিশালি হয়। কারণ
জেনারেশন আপডেট হওয়ার সাথে সাথে প্রসেসর এর চিপগুলো তত ছোট হতে থাকে। যার ফলে
প্রসেসর কম শক্তি অপচয় ও ল্যাপটপের ব্যাটারির কম চার্জ খরছ করেও বেশি কাজ করতে
পারে। বর্তমানে 10th, 11th ও 12th জেনারেশনের ল্যাপটপ বেশি জনপ্রিয়। তবে জেনারেশন যত
বেশি ল্যাপটপের দাম তত বেশি হবে।
২। র্যাম (RAM)
র্যাম ল্যাপটপ এর আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ল্যাপটপের প্রসেসর এর চাহিদার তুলনায়
র্যাম কম হলে ল্যাপটপে ভালোমানের প্রসেসর থাকা সত্বেও ভালো গতি পাওয়া যাবে না।
সেই জন্য প্রসেসর এর শক্তি বিবেচনা করে ল্যাপটপের র্যাম কম বেশি হয়ে থাকে।
আপনি যদি Core i3 ল্যাপটপ কিনেন তাহলে অবশ্যই ৪ জিবি র্যাম এর ল্যাপটপ কিনবেন।
কিন্তু Core i5 প্রসেসর এর ল্যাপটপ কিনলে ৮ জিবি এবং Core i7 প্রসেসর এর ক্ষেত্রে
অবশ্যই ১৬ জিবি র্যাম এর ল্যাপটপ কিনতে হবে। সেই সাথে 8th, 9th, 10th, 11th ও 12th জেনারেশন
এর ল্যাপটপের ক্ষেত্রে অবশ্যই DDR4 র্যাম এর ল্যাপটপ ক্রয় করবেন। কারণ DDR4
র্যাম অন্যান্য র্যামের তুলনায় শক্তিশালি ও দ্রুত গতির হয়।
৩। রোম (হার্ড ডিস্ক)
কম্পিউটারের স্থায়ি ম্যামোরিকে হার্ড ডিস্ক ড্রাউভ বলা হয়। এই হার্ড ডিস্কে
আমাদের সকল ফাইল সংরক্ষণ করা থাকে। সেই সাথে ল্যাপটপের হার্ড ডিস্কের C Drive এ
ল্যাপটপের সকল সিস্টেম সফটওয়্যারগুলো ইনস্টল থাকে। আমরা সাধারণ ব্যবহারকারীরা
ল্যাপটপের হার্ড ডিস্ককে তেমন গুরুত্ব দেই না। নরমালি আমাদের ল্যাপটপে 1TB এর
হার্ড ডিস্ক পেলেই আমরা খুশি হয়ে যাই।
কিন্তু আমরা জানি না যে, ল্যাপটপের হার্ড ডিস্ক, প্রসেসর ও র্যাম এই তিনটি
হার্ডওয়্যারের সমন্বয়ে একটি ল্যাপটপের স্পিড নির্ভর করে। এই তিনটির মধ্যে কোন
একটি অংশ দূর্বল হলে আপনার ল্যাপটপ থেকে আশানুরুপ স্পিড পাবেন না। কাজেই শুধু
মাত্র বড় সাইজের হার্ড ডিস্ক হলেই হবে না, সেই সাথে ভালোমানের হার্ড ডিস্ক হতে
হবে।
বর্তমানে মার্কেটে দুই ধরনের হার্ড ডিস্ক পাওয়া যায়। একটি হচ্ছে Hard Disck Drive
(HDD) এবং অন্যটি হচ্ছে Solide State Drive (SSD). একটি HDD এর তুলনায় SSD অনেক
দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়। নরমালি একটি HDD এর স্পিড 100MB এর একটু বেশি হয়, কিন্তু
একটি SSD এর স্পিড 600MB এর কাছাকাছি হয়ে থাকে। তাছাড়া বর্তমান মার্কেটে NVME M.2
নামে আরেক ধরনের SSD রয়েছে যার স্পিড প্রায় 4GB এর অনেক বেশি।
কোন ধরনের হার্ড ডিস্ক ভালো?
হার্ড ডিস্ক নিয়ে আমি আর বেশি কিছু বিশ্লেষণ করতে চাইছি না। কারণ বেশি বিশ্লেষণ
করলে আপনি কনফিউজ হয়ে যাবেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সাধারণত SSD
যুক্ত ল্যাপটপ এর দাম অনেক বেশি হয়ে থাকে বিধায় আমাদের দেশে 521GB SSD এর বেশি
ল্যাপটপ পাওয়া যায় না।
আপনার বাজেট মাঝারি অংকের হয়ে থাকলে একটি 1TB হার্ড ডিস্ক এর পাশাপাশি একটি 128GB
কিংবা 256GB SSD যুক্ত ল্যাপটপ কিনলে ল্যাপটপের স্পিড অনেক বেশি পাবেন। কারণ SSD
এর মধ্যে Windows ইনস্টল করে রাখলে ল্যাপটপ অনেক দ্রুত কাজ করবে।
৪। মাদারবোর্ড
মাদারবোর্ড একটি প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড যা কম্পিউটারের মূল ফাউন্ডেশন হিসেবে
কাজ করে। এটি কম্পিউটার চ্যাসিসের নিচে কিংবা ব্যাক সাইডে থাকে। মাদারবোর্ড
কম্পিউটারের অন্যান্য ডিভাইসে পাওয়ার সাপ্লাই দেয় এবং সিপিইউ, র্যাম ও অন্যান্য
হার্ডওয়্যারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। মাদারবোর্ডের আরো অনেক নাম রয়েছে যেমন,
এমবি, বেস বোর্ড, মোবো, মেইন বোর্ড, মেইন সার্কিট বোর্ড, এম-বোর্ড, সিস্টেম
বোর্ড, প্ল্যানার বোর্ড, লজিক বোর্ড ইত্যাদি। কম্পিউটারের সাইজ ও টাইপের উপর
ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরণের মাদারবোর্ড রয়েছে।
ল্যাপটপ এর মাদারবোর্ড নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। তবে ল্যাপটপ কেনার সময় আপনার
ল্যাপটপে থাকা মাদারবোর্ড সব ধরনের আপডেট ডিভাইস এর চিপ সাপোর্টেড কি না সেটা
ভালোভাবে জেনে নিবেন। বিশেষকরে DDR4 RAM, M.2 SSD এবং NVME M.2 SSD সাপোর্ট করে
কি না তা জেনে নিয়ে ল্যাপটপ কিনবেন। তা না হলে ভবিষ্যতে ল্যাপটপ আপগ্রেট করতে
গিয়ে সমস্যা ফেইস করতে হবে।
৫। ল্যাপটপের ডিসপ্লে
সাধারণত 1366 x 768 সাইজের ডিসপ্লে হচ্ছে হাফ এইচডি এবং 1920 x 1080 সাইজের
ডিসপ্লে ফুল এইচডি। বর্তমান সময়ে হাফ এইচডি ডিসপ্লে এর চাহিদা খুব একটা নেই। সে
জন্য নতুন ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ফুল এইচডি ডিসপ্লে এর ল্যাপটপ কেনার
চেষ্টা করবেন। তাহলে হাই রেজুলেশনের ভিডিও দেখা, গেম খেলা ও গ্রাফিক্সের কাজ করার
ক্ষেত্রে অনেক স্বচ্ছ ও ঝকঝকে ছবি দেখতে পাবেন।
তবে শুধুমাত্র ফুল এইচডি ডিসপ্লে এর ল্যাপটপ কিনলেই হবে না। ফুল এইচডি ডিসপ্লে
কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ড আছে কি না সেটাও গুরুত্ব
সহকারে দেখতে হবে। কারণ ফুল এইচডি ডিসপ্লে এর ল্যাপটপে গ্রাফিক্স কার্ড না থাকলে
ডিসপ্লে ফুল এইচডি হওয়া সত্বেও ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে এবং গ্রাফিক্স এর কাজ করার
সময় ফুল এইচডি এর সুবিধা পাওয়া যাবে না।
কারণ ফুল এইচডি সাপোর্ট পাওয়ার জন্য গ্রাফিক্স কার্ড এর প্রয়োজন হয়। কাজেই ফুল
এইচডি ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে ল্যাপটপে মিনিমাম 2GB গ্রাফিক্স কার্ড রয়েছে এমন
ল্যাপটপ কেনার চেষ্টা করবেন। তবে আপনি হাই রেজুলেশন গেম খেললে কিংবা গ্রাফিক্স
ডিজাইনের কাজ করলে 4GB গ্রাফিক্স কার্ড সমৃদ্ধ ল্যাপটপ কিনলে আরো ভালো গ্রাফিক্স
সাপোর্ট পাবেন।
৬। ব্যাটারি ক্যাপাসিটি
ব্যাটারির মাধ্যমে চার্জ করে বিদ্যুৎ ছাড়া ল্যাপটপ যেকোন জায়গাতে চালানো যায়
বিধায় ল্যাপটপের চাহিদা এত বেশি। ল্যাপটপের ব্যাটারির গায়ে যে রেটিং দেওয়া থাকে
সেটি দেখে ল্যাপটপের ব্যাটারি কেনা উচিত। যে সকল ব্যাটারীর গায়ে 44Wh বা 50Wh
লেখা থাকে সেগুলো বেশি সময় ধরে চার্জ় সংরক্ষণ করতে পারে। ল্যাপটপের অফিসিয়াল
ডকুমেন্ট দেখে এর ব্যাটারি ব্যাকআপ টাইম সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নেবেন। নরমালি ৬
থেকে ৮ ঘন্টা ব্যাকআপ পাওয়া যায় এমন ল্যাপটপ কেনার চেষ্টা করবেন।
৭। ল্যাপটপ সাইজ এবং ওয়েইট
আপনি কোন ধরনের কাজের জন্য ল্যাপটপ কিনছেন সেটার উপর ডিপেন্ড করে আপনাকে
ল্যাপটপের সাইজ এবং ওয়েইট নির্ধারণ করতে হবে। কারণ আপনি যদি ঘরে বসে কাজ করার
জন্য ল্যাপটপ কিনেন, তাহলে এক ধরনের ল্যাপটপ হবে এবং বিভিন্ন জায়গায় বাহিরে কাজ
করার জন্য ল্যাপটপ কিনলে আপনার জন্য আরেক সাইজের ল্যাপটপ হবে।
সাধারণত যারা বিভিন্ন সময় ল্যাপটপ সাথে নিয়ে ঘুরতে হয় এবং বিভিন্ন মিটিংয়ে
প্রেজেনটেশন করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রে একটু ছোট সাইজের হালকা পাতলা স্লিম ল্যাপটপ
কেনা ভালো। এতেকরে সহজে বহন করা সম্ভব হয় এবং যেকোন জায়গাতে অনায়াসে ব্যবহার করতে
কমফরটেবল হয়।
সচরাচর ল্যাপটপে বাহির কাজ করার প্রয়োজন না হলে আপনি ১৫ ইঞ্চি ল্যাপটপ কিনতে
পারেন। তবে বাহিরে কাজ করার ক্ষেত্রে ১৪ ইঞ্চি ল্যাপটপ এবং হালকা পাতলা গঠনের
ল্যাপটপ কেনা ভালো। সেই সাথে আপনার বাজেট একটু বেশি হলে Note Book কিনতে পারলে
বাহিরে কাজ করা এবং বহন করা আপনার জন্য আরো সহজ হবে।
৮। অপারেটিং সিস্টেম (সফটওয়্যার)
অপারেটিং সিস্টেম এর ক্ষেত্রে আমি বলব সবসময় Windows অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার
করা সবচাইতে ভালো। কারণ এটি খুব অল্প দামে কিনতে পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি টাকা খরছ
করতে না চাইলে ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে ক্রাক করেও সম্পূর্ণ ফ্রিতে ব্যবহার
করতে পারবেন।
তবে আমি বলব পাইরেট অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার না করে কিছু টাকা খরছ করে হলেও
Windows 10 Pro ভার্সন ব্যবহার করলে ল্যাপটপ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেশ ভালো
পারফর্মেন্স দেবে। তাছাড়া বাজেট কম হলে আপনি Windows 10 Home ব্যবহার করতে পারেন।
৯। অন্যান্য হার্ডওয়্যার
ল্যাপটপে অনেক সময় এসডি কার্ড লাগানোর দরকার পড়ে। এজন্য ল্যাপটপের সাথে এসডি
কার্ডের স্লট আছে কিনা তা দেখে নিবেন। এই সুবিধা থাকলে কার্ড রিডার ছাড়াই
মোবাইলের ও ক্যামেরার এসডি কার্ড এর সকল ফাইল ল্যাপটপ থেকে একসেস করতে পারবেন।
ইউএসবি পোর্ট ল্যাপটপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইউএসবি পোর্ট ৩ এর মাধ্যমে
ইউএসবি ২ এর তুলনায় দ্রুত গতিতে ডাটা ট্রান্সফার করা যায়। সে জন্য ল্যাপটপের
পোর্টগুলো ইউএসবি ৩ সাপোর্টেড কিনা তা অবশ্যই দেখে নিবেন।
তাছাড়া একটি ভালোমানের ল্যাপটপ কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেওয়া উচিত যে ল্যাপটপের
কিবোর্ডে ব্যাকলাইট আছে কি না? কারণ ব্যাকলাইট থাকলে অন্ধকারেও ল্যাপটপের বোতাম
পরিষ্কারভাবে দেখা যায়।
১০। কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনবেন?
ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে ব্রান্ড সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অধিকাংশ লোক
ল্যাপটপ কেনার পূর্বে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না যে, আমি কোন ব্রান্ডের
ল্যাপটপ কিনব বা কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ সবচাইতে ভালো। ব্রান্ডের ক্ষেত্রে কেউ
বলে Dell ভালো, কেউ বলে HP ভালো, আবার কেউ বলে ASUS ভালো, আবার কেউ বলছে ACER ও
Lenovo ভালো। ল্যাপটপ সম্পর্কে বিভিন্ন ভালো খারাপের রিভিউ দেখতে দেখতে একজন
ল্যাপটপ বায়ার কনফিউশনে পড়ে যান।
ব্রান্ডের ক্ষেত্রে আমি সরাসরি বলব যে, সবচাইতে ভালো ব্রান্ডের ল্যাপটপ হচ্ছে
Apple এর ল্যাপটপ। কিন্তু Apple ল্যাপটপ এর দাম খুব বেশি হওয়ার কারনে এটি আমাদের
ধরা ছুয়ার বাহিরে থাকে। তাছাড়া Apple এখনো পর্যন্ত অফিসিয়ালি আমাদের দেশে তাদের
ল্যাপটপ সেল করছে না বিধায় সার্ভিসিং এর ক্ষেত্রে সমস্যা পড়তে হয়। সো আমি
ব্যক্তিগতভাবে Apple ল্যাপটপ কেনার পক্ষে নয়।
মিড বাজেটের মধ্যে বর্তমানে সবচাইতে ভালো ব্রান্ডের ল্যাপটপ হচ্ছে HP, DELL, ASUS
এবং ACER. আমি ব্যক্তিগতভাবে HP ProBook সিরিজের ল্যাপটপ একটু বেশি পছন্দ করি।
তাছাড়া ASUS Vivobook সিরিজের ল্যাপটপগুলো বর্তমানে দেখতে বেশ আকর্ষণীয় ও
মানসম্পন্ন হওয়া ASUS আমার পছন্দের ২য় স্থান দখল করে নিয়েছে।
এছাড়াও ল্যাপটপ কেনার ক্ষেত্রে আপনি যে ব্রান্ডের ল্যাপটপ কিনছেন সেই ব্রান্ডের
ল্যাপটপ এর সার্ভিস সেন্টার আপনার শহরে আছে কি না সেটা জেনে নিয়ে ল্যাপটপ কেনার
চেষ্টা করবেন। তা না হলে ল্যাপটপ কেনার পর ল্যাপটপে কোন ধরনের সমস্যা হলে
সার্ভিসিং করানোর সময় ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে।
শেষ কথা
এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়লে আমার মনে হয় একটি ভালো ল্যাপটপ চেনার উপায় বা ভালো
ল্যাপটপ এর বৈশিষ্ট সম্পর্কে জানার কোনকিছু বাকি থাকবে না। যারা পোস্টটি মনোযোগ
দিয়ে পড়েছেন তারা এখন থেকে কারো পরামর্শ ছাড়া খুব সহজে নিজে নিজে একটি ভালোমানের
ল্যাপটপ কিনতে পারবেন।
ল্যাপটপ কেনার বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
তাছাড়া আপনার কাছে কোন ব্রান্ডের ল্যাপটপ সবচাইতে ভালো লাগে সেটা আমাদেরকে জানিয়ে
রাখতে পারেন। সেই সাথে আপনি বর্তমানে কোন ব্রান্ডের এবং কোন স্পেসিফিকেশনের
ল্যাপটপ ব্যবহার করছেন, সেটা জানাতে ভুলবেন না।