নতুন ব্লগারদের ব্লগিং বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ অভিজ্ঞতা না থাকার কারনে অনেক ধরনের ভুল করে থাকে। এই সকল ভুলের কারনে নতুন ব্লগাররা ব্লগিং ক্যারিয়ারে সফল হতে পারে না। আবার অধিকাংশ লোক তাদের ভুল বুঝতে না পেরে তারা মনেকরে ব্লগিং আমার জন্য নয় এবং আমি ব্লগিং করে সফল হতে পারব না। এই ধরনের অবান্তর ধারনা মনের মধ্যে পোষণ করার কারনে তাদের ভুলগুলো খুঁজে বের করতে পারে না বিধায় মাঝ পথে এসে ব্লগিং ছেড়ে দেয়।
একটা কথা চিরন্তন সত্য যে, মানুষ মাত্রই ভুল করবে। আবার এটাও সত্য যে, মানুষ ভুল করে তার ভুলগুলো নিজেই সংশোধন করে নিবে। কাজেই আপনি ব্লগিংয়ে কেন সফল হতে পারছেন না, কোথায় কোথায় ভুল করছেন, সেটা আপনাকে নিজে নিজে ফাইন্ডআউট করতে হবে। যখন ব্লগিং এর ভুল খুঁজে সেগুলোকে সংশোধন করতে পারবেন, তখন আপনি অবশ্যই একদিন ব্লগিংয়ে সফল হতে পারবেন।
ব্লগাররা কি ধরনের ব্লগিং Mistake করে?
আমি আজকের পোস্টে ৫০ টি ব্লগিং Mistake নিয়ে আলোচনা করব, যে ভুলগুলোর কারনে আপনি ব্লগিংয়ে সফলতা পাচ্ছেন না। আমার বিশ্বাস আজকের পোস্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে ভুলগুলো সংশোধন করে নিলে আপনিও একদিন একজন সফল ব্লগার হয়ে উঠতে পারবেন।
১। ব্লগিংয়ে আগ্রহ না থাকা
অধিকাংশ নতুন ব্লগাররা শুধুমাত্র অন্যের দেখাদেখি বা অনলাইনে কোন ব্লগ পড়ে কৌতুহলের বশে একটি
ফ্রি ব্লগ তৈরি করে ব্লগিং শুরু করে। তারা মনেকরে কোন রকম ছয় নয় করে মাঝে মধ্যে ব্লগে এক দুটি পোস্ট করলে একজন সফল ব্লগার হয়ে যাবে এবং অন্যের সাথে গল্প করবে তার একটি ব্লগ আছে।
আবার কিছু কিছু ব্লগার আছে যারা লিখতে বসলে কোন টপিক খুঁজে পায় না। অর্থাৎ কি নিয়ে লিখবে সেটি নির্ধারণ করতে পারে না। সে জন্য ব্লগিং শুরু করার আগে আপনাকে নির্ধারণ করে নিতে হবে আপনি কোন বিষয়ে কাজ করার জন্য আগ্রহ রাখেন।
যে বিষয়ে লিখার কোন আগ্রহ নেই, সেই বিষয়ে পূর্ণ জ্ঞান না রেখে, নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ব্লগ লেখার চেষ্টা করলে, সেই ব্লগের আর্টিকেল পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না। আগ্রহ ছাড়া কোন কাজে যেমন সফলতা পাওয়া যায় না, তেমনি ব্লগে লেখালেখি করার জন্য প্রচুর পরিমানে আগ্রহ না থাকলে, আপনি কখনো একজন সফল ব্লগার হতে পারবেন না।
২। নিয়মিত পোস্ট না করা
ব্লগিংয়ে সফলতা পাওয়ার জন্য ব্লগে নিয়মিত পোস্ট করা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি মাঝে মধ্যে একটি দুটি পোস্ট ব্লগে লিখে নিজেকে সফল ব্লগার করার চেষ্টা করলে, আপনার মনের আশা কখনো পূরণ হবে না। যারা ব্লগে নিয়মিত পোস্ট শেয়ার করে, তাদের ব্লগ
সার্চ ইঞ্জিন ও ভিজটর উভয়ের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।
এখানে নিয়মিত পোস্ট বলতে আমি আপনাকে প্রতিদিন পোস্ট করার কথা বলছি না। আপনি যদি প্রতিদিন পোস্ট করতে পারেন, তাহলে সেটা আপনার জন্য হবে বোনাস পয়েন্ট। ব্লগে প্রতিদিন ভালোমানের পোস্ট লিখতে পারলে আপনার সফলতা কেউ ঠেকাতে পারবে না। তবে নিয়মিত পোস্ট করতে না পারলেও একটা নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে মিনিমাম দুটি পোস্ট অবশ্যই শেয়ার করতে হবে। আপনি এক মাস গ্যাপ দিয়ে হঠাৎ করে এক সপ্তাহে ৭ টি পোস্ট করলেও ব্লগিং করে সফল হতে পারবেন না।
৩। কপিরাইট পোস্ট করা
অন্যের ব্লগের পোস্ট কপি করে সফল হতে চাইলে আমি আপনাকে সরাসরি বলব যে, ব্লগিং আপনার জন্য নয়। আপনি ব্লগিং ছেড়ে দিয়ে অন্যকোন কাজ খুঁজে নেন। অন্যের ব্লগের আর্টিকেল কপি করে আজ পর্যন্ত কোন ব্লগার বিন্দুমাত্র সফল হতে পারেনি। আপনি যদি ভাবেন অন্যের ব্লগের আর্টিকেল কপি করে আপনার ব্লগের পোস্ট র্যাংক করাতে পারবেন, তাহলে আমি বলব ব্লগিং সম্পর্কে আপনার কোন ধারনা নেই। এই বিষয়ে আমি আপনাকে ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
আপনারা অনেকে জানেন যে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আমাদের ব্লগের নাম ছিল “
প্রযুক্তি ডটকম”। কিন্তু সঙ্গত কারনে আমাদের ব্লগের নাম পরিবর্তন করে “ব্লগার বাংলাদেশ” করতে হয়েছে।
ব্লগের এড্রেস পরিবর্তন করার পর পোস্টগুলো নতুন করে
গুগল সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করাতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কারণ আমার ব্লগের অধিকাংশ পোস্ট তখন অনেকে কপি করে ব্লগে ব্যবহার করছিল। সে জন্য গুগল আমার ব্লগের নতুন এড্রেসগুলো অন্যের ব্লগ থেকে কপিরাইট কনটেন্ট হিসেবে ধরে নেয় বিধায় পোস্ট গুগলে
ইনডেক্স হচ্ছিল না।
কিন্তু আমি নাছুড়বান্দা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে দেইনি। আমার ব্লগের যতগুলো পোস্ট অন্যরা কপি করে ব্যবহার করছিল, সবগুলো পোস্টের বিষয়ে আমি গুগল এর কাছে রেফারেন্স দিয়ে রিপোর্ট করতে থাকি। রিপোর্ট করার ১৫ দিনের মধ্যে গুগল কপিরাইট কনটেন্টগুলো সার্চ ইঞ্জিন হতে মুছে দেয় এবং আমার পোস্ট ধিরে ধিরে র্যাংক করতে থাকে।
এই বিষয়টি বলার অর্থ হচ্ছে যে, অন্যের ব্লগের আর্টিকেল কপি করে ব্লগিং করার মানুষিকতা থাকলে, সেটি বাদ দিয়ে দেন। আপনি নিজে যতটুকো জানেন সে বিষয়ে আপনার অভীজ্ঞতা মানুষের সামনে শেয়ার করতে থাকেন। শুরুর দিকে খুব ভালো পোস্ট লিখতে না পারলেও একসময় আপনি একজন ভালোমানের কনটেন্ট রাইটার হতে পারবেন।
৪। এসইও না করা
ব্লগে সার্চ ইঞ্জিন হতে ভিজিটর পাওয়ার জন্য এসইও এর বিকল্প নেই। অধিকাংশ লোক ব্লগে পোস্ট লেখে কিন্তু
এসইও এর নিয়ম না মেনে লেখার কারনে পোস্টে ভালোমানের আর্টিকেল থাকা সত্বেও সহজে পোস্ট র্যাংক করতে পারেন না। একটি ব্লগ বা ব্লগের পোস্ট এসইও করার জন্য খুব বেশি অভীজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। অনলাইনে অনেক ব্লগ রয়েছে যেগুলো পড়লে এসইও সংক্রান্ত প্রায় সকল বিষয় জেনে নিতে পারবেন।
৫। ছোট পোস্ট লেখা
নতুন ব্লগারদের জন্য এটি খুব কমন। নতুনরা বেশিরভাগ নিউজ সাইটগুলোকে অনুসরণ করে টেক বিষয়ে ছোট ছোট আর্টিকেল লিখে মনেকরে তিনি পোস্টটি বেশ ভালোভাবে লিখে ফেলেছেন। আরে ভাই, একটা বিষয় বুঝার চেষ্টা করুন, নিউজ পেপার সাইটগুলোর ট্রাফিক সার্চ ইঞ্জিন হতে আসে না। তাদের অধিকাংশ ভিজিটর শুধুমাত্র ফেসবুক ও টুইটার থেকে আসে। আপনি যেহেতু একজন ব্লগার আপনাকে সবসময় গুগল সার্চ ইঞ্জন সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিন হতে ট্রাফিক গ্রো করার টার্গেট নিয়ে ব্লগের আর্টিকেল লিখতে হবে।
সাধারণত টেক রিলেটেড ব্লগের পোস্ট বড় হলে সার্চ ইঞ্জিনে সেগুলো সহজে র্যাংক করে। আপনি যে বিষয়ে পোস্ট লিখছেন সে বিষয়ে বিশ্লেষণ করে লিখুন। প্রয়োজন বিভিন্ন উদাহরণ টেনে বুঝানোর চেষ্টা করুন। প্রত্যেকটি পোস্টে কমপক্ষে ১০০০-১৫০০ ওয়ার্ডের সমন্বয়ে পোস্ট লেখার চেষ্টা করুন।
৬। পোস্টে ছবি ব্যবহার না করা
অনেকে রয়েছে যারা পোস্টের ভীতরে ছবি ব্যবহার না করে শুধুমাত্র আর্টিকেল লিখে থাকে। এটা মুটেও ঠিক নয়। আপনি অবশ্যই জানেন যে, যখন
ফেসবুক ও টুইটারে ব্লগের কোন একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়, তখন পোস্টের লিংকের সাথে ছবি শো হয় এবং সেই ছবি দেখে ভিজিটর লিংকে ক্লিক করে। তাছাড়া গুগল এর ইমেজ সার্চ নামে একটি অপশন রয়েছে। পোস্টে ইমেজ থাকলে সেখান থেকে ট্রাফিক পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
৭। যেকোন বিষয়ে লেখা শুরু করা
অধিকাংশ ব্লগারদের মাথায় যেকোন বিষয়ে ধারনা আসলে বা কোন বিষয়ে সামান্য জ্ঞান অর্জন করলেই সেই বিষয়ে লেখা শুরু করে দেয়। অথচ তারা চিন্তা করে না, সে যে বিষয়ে লিখছে সেই বিষয়ে অনলাইনে অনেক ভালোমানের পোস্ট রয়েছে। কোন টপিকের উপর সামান্য নলেজ নিয়ে লিখলে সেই পোস্ট দিয়ে আপনি অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতায় পারবেন না। যার ফলে আপনার পোস্টটি সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক করতে না পেরে বেকার পড়ে থাকবে। কাজেই কোন বিষয়ে পোস্ট লিখার আগে যাচাই বাছাই করে পূর্ণ অভীজ্ঞতা নেওয়ার পর অন্যদের চাইতে ভালোভাবে লেখার চেষ্টা করবেন।
৮। পোস্টে অপ্রয়োজনীয় বাক্য লেখা
পোস্ট লেখার সময় আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, আপনি যে বিষয়ে পোস্ট লিখছেন পোস্টের প্রত্যেকটি বাক্য যেন সেই বিষয়কে কেন্দ্র করে হয়। একটি বিষয় নিয়ে লেখার সময় অপ্রয়োজনীয় বাক্য প্রয়োগ করার কারনে ভিজিটর আপনার পোস্ট পড়তে বিরক্ত হবে। অতিমাত্রায় এ ধরনের পোস্ট লিখলে পাঠক এক সময় আপনার ব্লগকে পুরোপুরো ইগনর করবে।
৯। পোস্টের কোয়ালিটি ভালো না হওয়া
পোস্ট লেখার সময় অবশ্যই আপনার পোস্টের কোয়ালিটির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পোস্ট র্যাংক করানোর জন্য এবং পাঠকের কাছে আপনি একজন অভীজ্ঞ লোক হিসেবে নিজেকে প্রমান করার জন্য পোস্টে সবসময় ভালোমানের আর্টিকেল লেখতে হবে। ভালোমানের আর্টিকেল পাঠক যেমন পছন্দ করে তেমনি সার্চ ইঞ্জিনও পছন্দ করে।
১০। পাঠকের জন্য পোস্ট না লেখা
অনেকে আছে শুধুমাত্র নিজের অভীজ্ঞতার কথা ব্লগে লিখে যায়। কিন্তু চিন্তা করে আমি যে বিষয়ে লিখছি সে বিষয়ে পাঠকের আগ্রহ আছে কি না। কোন বিষয়ে লেখার সময় পাঠকের পছন্দের কথাটি বিবেচনায় রেখে সহজবোধ্য করে উস্থাপন করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।
১১। অন্যের ব্লগের পোস্ট না পড়া
কিছু কিছু লোক আছে যারা নিজেকে জ্ঞানি মনেকরে। তারা কখনো অন্যের ব্লগ থেকে জানার চেষ্টা করে না। আপনি যে বিষয়ে পোস্ট লিখবেন সেই বিষেয়ে পোস্ট লিখার পূর্বে কমপক্ষে ২-৩ ঘন্টা বিভিন্ন ভালোমানের ব্লগের আর্টিকেল পড়ে নিবেন। এতেকরে তাদের ব্লগ থেকে আপনি বিভিন্ন বিষয় জেনে নিয়ে আরো ভালোভাবে পোস্ট লিখতে পারবেন। তাছাড়া এ বিষয় ফলো করলে আপনার কম্পিটিটর কারা হবে সে বিষয়টি জানার কারনে তাদের চাইতে আরো ভালোভাবে পোস্ট লিখতে পারবেন।
১২। গ্যাস্ট পোস্ট না করা
ব্লগের পরিচিতি ও ব্যাকলিংক বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে গ্যাস্ট ব্লগিং এর বিকল্প নেই। আপনি সবসময় নিজের ব্লগে লিখে যাবেন, এমনটা করা উচিত নয়। কিছু পাওয়ার জন্য কিছু হারাতে হয়। মাঝে মধ্যে কিছু পোস্ট আপনার ব্লগে না করে ভালোমানের ব্লগে গ্যাস্ট পোস্ট করার চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনার পোস্টটি ভালো হলে সেই ব্লগের পাঠক সহজে আপনার ব্লগ পড়তে আসবে।
১৩। অন্যের ব্লগে কমেন্ট না করে
আপনি অন্যের ব্লগের পোস্ট পড়লেন অথচ আপনার অনুভুতি প্রকাশ করলেন না, এটা মুটেও ঠিক না। কোন পোস্ট পড়ার পর ভালো লাগলে আপনার অনুভূতি প্রকাশ করুন। অথবা পোস্টে কোন ধরনের ভূল থাকলে সেটি কমেন্ট করে পোস্টের এ্যাডমিনকে জানান। এ ধরনের কাজ করলে অন্য ব্লগারদের সাথে আপনার এক ধরনের কমিউনিটি তৈরি হবে। বিশেষকরে ভূল ধরে দিতে পারলে, আপনি তাদের কাছে একজন এক্সপার্ট হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠবেন।
১৪। কমেন্টের উত্তর না দেওয়া
আপনার ব্লগে যে ধরনের কমেন্ট করা হউক না কেন, আপনি সবসময় কমেন্টর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কোন ধরনের সমস্যা সংক্রান্ত প্রশ্ন হলে অবশ্যই সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করুন। কমেন্টর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান দিলে আপনার ব্লগের রেগুলার পাঠক বৃদ্ধি পাবে।
১৫। কমেন্টে সঠিক উত্তর না দেওয়া
আপনার ব্লগের পাঠককে কখনো ভূল উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবেন না এবং পাঠকদের কোন ধরনের উষ্কানিমূলক ভাষা প্রয়োগ করবেন না। অনেক পাঠক থাকবে যারা বিভিন্ন ধরনের খারাপ মন্তব্য করবে কিন্তু আপনি কখনো তাদের সাথে প্রতিউত্তরে খারাপ ভাষা প্রয়োগ করবেন না। সবাই আপনার পোস্ট সম্পর্কে পজিটিভলি কথা বলবে এমনটা কখনো আশা করা উচিত নয়।
১৬। সঠিক প্লাটফর্মে ব্লগিং না করা
আমি গুগল
ব্লগার দিয়ে ব্লগিং শুরু করব নাকি ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ব্লগিং শুরু করব, এই প্রশ্নটি সকল নতুন ব্লগারদের মাথায় ঘুরপাক খায়। কেউ বলবে ওয়ার্ডপ্রেস ভালো আবার কেউ বলবে ব্লগার ভালো। এখানে আপনি কারো কথায় কান দিয়ে আপনাকে ঠিক করতে হবে, আপনার জন্য কোনটি ভালো। কোন প্লাটফর্ম সম্পর্কে আপনার অভীজ্ঞতা আছে বা কোন প্লাটফর্মে কাজ করলে আপনি সবকিছু মেনটেইন করতে পারবেন, ইত্যাদি বিষয়ে বিবেচনা করে আপনার অভীজ্ঞতার আলোকে সঠিক ব্লগিং প্লাটফর্ম বাছাই করে নিতে হবে।
১৭। টপ ডোমেন না কিনা
আপনার ব্লগটি পাঠকের কাছে গ্রহনযোগ করে তুলার জন্য অবশ্যই একটি
টপ ডোমেন ব্লগে যুক্ত করে নিবেন। গুগল এর কাছে টপ লেভেলের ডোমেনের খুব বেশি ভ্যালু না থাকলেও পাঠকের কাছে টপ ডোমেনের অবশ্যই ভ্যালু আছে। যেমন-
সাধারণত গুগল এটা দেখেনা যে, আপনার ব্লগের ডোমেন টপ ডোমেন না সাব ডোমেন। গুগল সবসময় দেখে পোস্টের কোয়ালিটি কেমন এবং পোস্ট সঠিকভাবে এসইও করা কি না? এ ক্ষেত্রে আপনার সাবডোমেন দিয়ে তৈরি করা ব্লগের একটি পোস্ট এবং অন্য আরেকটি টপ ডোমেনের পোস্টের চাইতে ভালো হলে, আপনার পোস্টটি অবশ্যই গুগলে র্যাংক করবে এবং সেটি গুগল সার্চে সবার উপরে থাকবে। কিন্তু ভিজিটর যখন সার্চ করে দেখতে পাবে আপনার পোস্ট সাব ডোমেইন দিয়ে তৈরি তখন নরমালি আপনার পোস্টের চাইতে টপ ডোমেনের পোস্টটিকে গুরুত্ব দেবে।
১৮। সঠিক থিম বাছাই না করা
একটি ব্লগের জন্য ভালোমানের থিম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার ব্লগের ডিজাইন দেখতে কেমন এবং সেটি কতটা ইউজার ফ্রেন্ডলি সেটা দ্বারা একটি ব্লগের ভ্যালু নির্ধারণ করা যায়। আবার প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ডিজাইন করা ঠিক নয়। ব্লগের থিম বাছাই করার ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।
- দ্রুত গতির থিম হতে হবে।
- অবশ্যই মোবাইল ফ্রেন্ডলি হতে হবে।
- ইউজার ফ্রেন্ডলি হতে হবে, যাতে যে কেউ সহজে ব্লগের আর্টিকেল পড়তে পারে।
- এসইও অপটিমাইজ হতে হবে।
১৯। অতিরিক্ত ক্যাটাগরি (নিশ) নিয়ে কাজ করা
আপনি মনে রাখবেন প্রত্যেক মানুষের জ্ঞানের পরিধির একটা সীমা আছে। কারণ মানুষ কখনো সর্বজান্তা হতে পারবে না। সে জন্য বিভিন্ন বিষয় নিয়ে না লিখে নির্দিষ্ট কিছু টপিক নিয়ে ব্লগ লেখার চেষ্টা করবেন। কারণ মোবাইল সংক্রান্ত ব্লগে হেলথ রিলেটেড টপিক নিয়ে লিখলে পাঠক সেটিকে স্বাভাবিকভাবে নিবে না। কারণ আপনার ব্লগে মোবাইল নিয়ে লিখেন বিধায় সবাই এ বিষয়ে পড়তে আসবে, হেলথ বিষয়ে জানতে আসবে না। কাজেই ভেরাইটিজ বিষয়ে না লিখে নির্দিষ্ট দু চারটি বিষয়ে লেখাটা সবচাইতে ভালো।
২০। সবসময় ব্লগের পিছনে লেগে থাকা
বেশিরভাগ নতুন ব্লগাররা ব্লগের পিছনে ২৪ ঘন্টা লেগে থাকে। এটা কখনো ঠিক নয়। এ ধরনের কাজ করলে ব্লগে লেখার আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। আপনি নির্দিষ্ট কিছু সময় রাখুন যে সময়ে আপনি ব্লগে আর্টিকেল লিখবেন এবং কিছু সময় রাখুন যখন আপনি শুধুমাত্র ব্লগের কমেন্টের উত্তর দেবন। সময় মেনটেন করে চললে ব্লগে কোয়ালিটি কনটেন্ট লেখা সম্ভব হয়। তাছাড়া অযথাই ব্লগের এটা ঠিক না, ওটা ঠিক, এই জিনিসটা অন্যের ব্লগে আছে আমার ব্লগে নেই, এইসব বিষয়ে সময় নষ্ট না করে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ করুন।
২১। সোশ্যাল মিডিয়াতে সময় নষ্ট করা
ব্লগে ট্রাফিক গ্রো করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এর গুরুত্ব রয়েছে। কিন্তু এতটা জরুরী নয় যে, সোশ্যাল মিডিয়া হতে ব্লগে ট্রাফিক পেতেই হবে। আপনি যদি গুগল সার্চ ইঞ্জিন হতে ট্রাফিক গ্রো করতে পারেন, তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতে কাজ না করলেও চলবে। সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য বড়জোর আপনার ব্লগের নামে একটি
ফেসবুক পেজ ও একটি ফেসবু গ্রুপ থাকলে যথেষ্ট। কোন নতুন পোস্ট করার পর সেগুলোতে পোস্ট শেয়ার করার বাহিরে অতিরিক্ত সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই।
২২। একাধিক ব্লগ তৈরি করা
একাধিক ব্লগ নিয়ে কাজ করলে আপনি কখনো ব্লগের কোয়ালিটি মেনটেন করতে পারবেন না। বিশ্বর যত বড় বড় সফল ব্লগার আছেন, তারা সবাই একটি ব্লগ নিয়ে কাজ করার জন্য পরামর্শ দেন। আপনি যদি মনেকরেন বিভিন্ন ব্লগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে বেশি টাকা আয় করবেন, তাহলে শুনে রাখুন আপনি একটি ব্লগ থেকেও টাকা আয় করতে পারবেন না। একাধিক ব্লগ না রেখে একটি ব্লগে মনোযোগ দিয়ে কাজ করুন। তাহলে অল্পদিনে ব্লগে ট্রাফিক গ্রো করতে পারবেন।
২৩। অভীজ্ঞ ব্লগারদের মতামত না নেওয়া
আপনি যত বিষয় জানুন না কেন কখনো নিজেকে অভীজ্ঞ মনে করবেন না। এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলো অন্যরা জানে সেগুলো আপনি জানেন না। সে জন্য আপনি যে বিষয় নিয়ে কাজ করছেন সেই বিষয়ের অন্যান্য অভীজ্ঞ ব্লগারদের সাথে ফেসবুক ও মোবাইলে আলোচনা করুন। তাহলে আপনার জানার পরিধি আরো বৃদ্ধি পাবে।
২০১৫ সালে ব্লগিং শুরু করার পর আমি অনেক বিষয় জানতাম না। সেই সময় জানার মত তেমন কোন ব্লগ ছিল না। MS Design এর এডমিন সুবেল ভাই এর সাথে তখন আমি মোবাইলে কথা বলে অনেক কিছু জেনে নিতাম। আপনি চাইলে এ ধরনের অভীজ্ঞ ব্লগারদের সাথে ব্লগিং বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করতে পারেন।
২৪। এডসেন্স এর পিছনে ছুটে বেড়ানো
ব্লগিংয়ে পা রাখা মাত্র সবাই এডসেন্স নিয়ে পাগল হয়ে যায়। মনেহয়
এডসেন্স পেলেই আলাদিনের জাদুর প্রদিপ হাতে চলে আসবে। ব্লগিং শুরু করার পর এডসেন্স নিয়ে চিন্তা না করে কিভাবে ব্লগে ভালোমানের আর্টিকেল শেয়ার করার মাধ্যমে ট্রাফিক বৃদ্ধি করবেন সেটা নিয়ে চিন্তা করুন। কারণ ব্লগে ভালোমানের আর্টিকেল ও ট্রাফিক থাকলে এডসেন্স পাওয়া কোন ব্যাপার হবে না।
তাছাড়া মনেকরুন, আপনি যেনতেন ২০-২৫ টি পোস্ট দিয়ে
এডসেন্স অনুমোদন করে নিলেন কিন্তু আপনার ব্লগে প্রতিদিন মাত্র ১০০-৩০০ ভিজিটর আসে। এ ক্ষেত্রে আপনার ব্লগে এডসেন্স থাকা সত্বে কত টাকা আয় করতে পারবেন? এ ধরনের ব্লগ দিয়ে সারা বছরেও ৫০ ডলার ইনকাম করতে পারবেন না। কাজেই এডসেন্স এর সাথে খেলা না করে আগে নিজের ব্লগের কোয়ালিটি মেনটেন করুন।
২৫। সার্চ ইঞ্জিনে ব্লগ সাবমিট না করা
একটি নতুন ব্লগ বিভিন্ন
সার্চ ইঞ্জিনে সাবমিট করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি নতুন ব্লগ তৈরি করার পর সেটি সস্পর্কে সার্চ ইঞ্জিন কিছু জানে না। এ ক্ষেত্রে Google,
Bing and Yahoo সার্চ ইঞ্জিন সহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে যত দ্রুত সম্ভব আপনার সাইট সাবমিট করে রাখবেন। নতুন ব্লগকে সার্চ ইঞ্জিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য অবশ্যই আপনার ব্লগ সার্চ ইঞ্জিনে সাবমিট করে নিবেন।
২৬। ব্যাকলিংক তৈরি না করা
ব্যাকলিংক হচ্ছে গুগল নাম্বার ওয়ান র্যাংকিং ফ্যাক্টর। ব্লগে একটি নতুন পোস্ট করার পর সেটিতে সঠিক পন্থায়
ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারলে পোস্টটি র্যাংক করবেই করবে। একটি পোস্ট করার সাথে সাথে আরেকটি পোস্ট না লিখে কিছু সময় ব্যয় করে বিভিন্ন উপায়ে সদ্য পাবলিশ করা পোস্টের জন্য ব্যাকলিংক বৃদ্ধি করার চেষ্টা করুন।
২৭। ভুল উপায়ে ব্যাকলিংক তৈরি করা
ব্যাকলিংক সম্পর্কে বিভিন্ন ব্লগ থেকে পড়ার পর নতুন ব্লগাররা বিভিন্ন ব্লগে কমেন্টের মাধ্যমে ব্যাকলিংক তৈরি করা চেষ্টা করেন। এটা উচিত নয়। আমি বলছি না যে, আপনি কমেন্টর মাধ্যমে ব্যাকলিংক করবেন না। কমেন্টের মাধ্যমে
ব্যাকলিংক তৈরি করবেন কিন্তু সঠিক উপায়ে করতে হবে। আপনি শুধু শুধু অন্যের ব্লগের কমেন্টে গিয়ে লিখলেন, আমাদের ব্লগে এটা আছে সেটা আছে, আমাদের ব্লগটি পড়ে আসুন। এতেকরে গুগল আপনার কমেন্টকে স্প্যাম হিসেবে ধরে নিবে এবং আপনার পোস্টটি ইগনর করবে। আর একবার গুগল আপনার পোস্ট ইগনর করলে, সেই পোস্ট আর কখনো র্যাংক করাতে পারবেন না।
২৮। ভুল ডোমেন বাছাই করা
বেশিরভাগ লোক ভালোমানের বিভিন্ন ব্লগের ডোমেন ফলো করে ডোমেন নেওয়ার চিন্তা করেন। এটা করা একদম ঠিক নয়। প্রত্যেকটি ডোমেন এক একটি ব্লগের ব্রান্ড হয়ে থাকে। নামকরা ব্লগগুলো যে ডোমেন ব্যবহার করছে সেটা দ্বারা তাদের ব্রান্ডিং প্রকাশ করছে। আপনি তাদের নামের সাথে তাল মিলিয়ে ডোমেন নিলে আপনার ব্রান্ডিং এর গুরুত্ব কমে যাবে। এই ধরনের ডোমেন দেখতে ভিজিটর যেমন পছন্দ করে না ঠিক তেমনি সার্চ ইঞ্জিন পছন্দ করে না।
২৯। পয়সা + পেশন এর জন্য কাজ করা
শুধুমাত্র টাকা টাকা করে ব্লগিং করলে
ব্লগিং করে কখনো টাকা আয় করতে পারবেন না। সবার আগে ব্লগিংকে আপনার পেশন হিসেবে নিতে হবে। শুরুর দিক এমনটা মনে করতে হবে যে, ব্লগিং করার পিছনে আমার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার জ্ঞান মানুষের সাথে শেয়ারা করা। মানুষ আমার অভীজ্ঞতা থেকে অনেক কিছু শিখবে এবং আমার সম্পর্কে জানবে। তাহলে ধিরে ধিরে আপনি ব্লগিং এর মাধ্যমে মানুষের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবেন এবং ব্লগের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে। আর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে টাকা আয় করার বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।
৩০। ট্রেন্ডিং বিষয়ে পোস্ট না লেখা
ব্লগ কিছুটা পুরাতন হলে এবং নিয়মিত পাঠক বৃদ্ধি পেলে অবশ্যই সমসাময়িক ট্রেন্ডিং বিষয়ে ব্লগে লেখার চেষ্টা করবেন। আপনার ব্লগের বিষয়ের সাথে রিলিটেড যে বিষয়টি নিয়ে মানুষ খুব বেশি আলোচনা করে, আপনি সেই বিষয়ে সবার আগে ক্রিয়েটিভ পোস্ট করার চেষ্টা করবেন। এ ধরনের পোস্ট সবার আগে শেয়ার করতে পারলে প্রচুর পরিমানে ভিজিটর পাওয়া যায়।
৩১। ইমেইল সাবস্ক্রিবসন ফরম যুক্ত না করা
ব্লগের সাইডবারে ও নিচে অনেক ব্লগে
ইমেইল সাবস্ক্রিবসন ফরম যুক্ত করা থাকে। ইমেইল সাবস্ক্রিবসন ফরম যুক্ত করলে কি হয় সেটাই অনেকে জানে না। ইউটিউবে চ্যানেল সাবস্ক্রাই করে রাখলে যেমন সেই চ্যানেলে নতুন কোন ভিডিও আপলোড করার পর ভিডিও এর নটিফিকেশন সেই ইমেইল আইডিতে চলে যায় ঠিক তেমন কোন লোক ইমেইল সাবস্ক্রিবসন ফরমের মাধ্যমে ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করে নিলে ব্লগে নতুন কোন পোস্ট করার পর সেটি সরাসরি ইমেলে চলে যায়। ইমেইল সাবস্ক্রিবসন ফরম আপনার ব্লগে ট্রাফিক বৃদ্ধি করতে হেল্প করবে।
৩২। সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার বাটন না থাকা
ব্লগে সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার বাটন যুক্ত না থাকাটা অনেক বড় একটা বোকামি। আপনার ব্লগের পোস্ট পড়ে কারো না কারো ভালো লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে সে আপনার ব্লগের পোস্ট ফেসবুকে বা টুইটারে শেয়ার করে রেখে দিতে চাইবে। কাজেই আপনার ব্লগের পোস্টের উপরে বা নিচে কিংবা বামপাশে ফ্লোয়েটিং করে সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার বাটন যুক্ত করে নিবেন।
৩৩। সোশ্যাল মিডিয়া পেজ না থাকা
প্রত্যেকটি ছোট বড় ব্লগের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া পেজ থাকা খুব জরুরী। আপনার ব্লগের নামে অবশ্যই একটি পেজ তৈরি করে নিবেন। সেই সাথে নতুন কোন পোস্ট করার সাথে পোস্টগুলো অবশ্যই প্রত্যেকটি সোশ্যাল মিডিয়া পেজে শেয়ার করে দিবেন। আরো সুবিধা নেওয়ার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলোর লিংক অবশ্যই ব্লগে যুক্ত করে রাখবেন।
ব্লগের জন্য এই পেজগুলো থাকা বাধ্যতামূলক-
- ফেসবুক পেজ।
- ফেসবুক গ্রুপ।
- টুইটার পেজ।
- Pinterest Page
- Linkedin
৩৪। ব্যাকলিংক Exchange করা
কিছু লোক আছে যারা যুক্তি পরামর্শ করে একজনের ব্লগের লিংক আরেকজনের ব্লগের সাথে লিংক করে ব্যাকলিংক তৈরি করার চেষ্টা করে। আবার কিছু কিছু লোক আছে যারা ব্লগস্পট ও ওয়ার্ডপ্রেস দিয়ে ফ্রিতে একাধিক ব্লগ তৈরি করে সেগুলোর মাধ্যমে ব্যাকলিংক বৃদ্ধি করে। এ ধরনের ব্যাকলিংকে প্রাইভেট ব্যাকলিংক বলে।
আপনারা হয়ত জানেন না গুগল পেঙ্গুইন এলগরিদম আপডেট হওয়ার ফলে প্রাইভেট ব্যাকলিংক বা লিংক বিনিময় করার দিন শেষ হয়েগেছে। আপনি যদি একাধিক ব্লগ হতে বার বার লিংক নিয়ে থাকেন, তাহলে গুগল সেগুলো Bad Backlinks হিসেবে ধরে নেবে। এ ধরনের ব্যাকলিংক দিয়ে আপনার ব্লগের কোন উপকারে আসবে না।
৩৫। ব্লগে সার্চ বক্স যুক্ত না করা
প্রত্যেকটি ব্লগে সার্চ বাক্স থাকা বাধ্যতামূলক। এটি একটি ব্লগের সুন্দর্য ও ইউজার এক্সপ্রিয়েন্স বৃদ্ধির পাশিাপাশি ব্লগের পাঠকদের ব্লগ থেকে তাদের চাহিদানুসারে পোস্ট খুঁজে নিতে সাহায্য করে। যারা ব্লগে সার্চ বক্স ব্যবহার করছেন না, তারা ব্লগের অনেক পেজভিউ হারাচ্ছেন।
৩৬। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পেজ না রাখা
আপনার ব্লগে কি নিয়ে কাজ করছেন, আপনার টিম মেম্বার কারা, আপনার ব্লগের ভবিষ্যত প্লান কি, ব্লগের প্রাইভেসি কিভাবে রক্ষা করেন এবং পাঠকরা আপনাদের সাথে কিভাবে যোগাযোগ করবে, এগুলোর জন্য প্রতিটি ব্লগে কিছু পেজ যুক্ত করে রাখতে হয়। এগুলো আপনার ব্লগের ভ্যালু অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে।
প্রত্যেকটি ব্লগে এই পেজগুলো রাখা বাধ্যতামূলক-
৩৭। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা না করা
আপনি যত বড় ব্লগার হন না কেন আপনার ব্লগে পোস্ট লেখার সাথে সাথে ট্রাফিক বৃদ্ধি হওয়া শুরু করবে না। একটি নতুন পোস্ট করার পর সেটি
সার্চ ইঞ্জিনে ইনডেক্স হতে এবং সার্চ ইঞ্জিন হতে ট্রাফিক গ্রো করতে অনেক সময় নেয়। আপনি অধৈর্য্য না হয়ে পোস্টের এসইও এর বিভিন্ন বিষয় খেয়াল রেখে পোস্ট এনালাইস করে ধৈর্য্যধরে অপেক্ষা করতে হবে। অধিকাংশ ব্লগার আছে যারা ব্লগের ট্রাফিক না পাওয়ার কারনে অধৈর্য্য হয়ে ব্লগের নতুন পোস্ট শেয়ার করা বন্ধ করে দেয়। অধৈর্য্য হয়ে নতুন পোস্ট করা বন্ধ করে দিলে আপনার ব্লগে ট্রাফিক বৃদ্ধির পরিবর্তে কমতে থাকবে।
৩৮। পোস্টের লিংক পরিবর্তন করা
কিছুলোক আছে যারা মনেকরে ব্লগের লিংক ঠিক হয়নি। লিংক পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তখন তারা পুরাতন পোস্টের লিংক পরিবর্তন করে নেয়। এ ধরনের কাজ কখনো করবেন না। পোস্ট র্যাংক করুক আর না করুক কখনো পোস্টের লিংক পরিবর্তন করবেন না। কারন এতেকরে সার্চ ইঞ্জিন হতে কেউ সেই পোস্টে ক্লিক করে লিংক না পেলে গুগল আপনার ব্লগের র্যাংকিং এর উপর প্রভাব ফেলবে। বিশেষ প্রয়োজনে লিংক পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে লিংক পরিবর্তন করার পর সেটি রিডাইরেক্ট করে দিবেন। তাহলে পাঠক এবং সার্চ ইঞ্জিন উভয়ে আপনার পরিবর্তন করা লিংক সম্পর্কে বুঝতে পারবে না।
৩৯। ঘন ঘন ব্লগের ট্রাফিক, কমেন্ট ও আয় চেক করা
কিছু কিছু লোক আছে যারা ব্লগিংয়ের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর ব্লগ কত ভিউ হয়েছে, কতটি কমেন্ট হয়েছে এবং এডসেন্স থেকে কত টাকা আর্নিং হয়েছে চেক করতে থাকে। যারা এ ধরনের কাজ করে তারা ব্লগের ট্রাফিক ও আর্নিং কম দেখলে নতুন পোস্ট করতে আগ্রহ পায় না। এগুলোতে মনোযোগ না দিয়ে আর্টিকেল লেখার দিকে অধিক মনোযোগ দেন, তাহলে ব্লগের ট্রাফিক, কমেন্ট ও আয় বৃদ্ধি পাবে।
৪০। আত্মবিশ্বাস না থাকা
আমি সবসময় বলে থাকি আপনি যে কাজ করুন না কেন, আপনার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আপনাকে এটা আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে, আমি যে বিষয়ে অভীজ্ঞ সে বিষয় নিয়ে অন্যরা পারলে আমি তাদের চাইতে ভালো পারব না কেন? এ ধরনের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস থাকলে আপনি অবশ্যই অন্যদের চাইতে ব্লগে ভালোমানের আর্টিকেল লিখতে পারবেন এবং দ্রুত সফল হতে পারবেন।
৪১। অন্যদের দিয়ে পোস্ট লেখানো
অনেক ব্লগার আছে যারা যে কাউকে তাদের ব্লগে আর্টিকেল লেখার সুযোগ দেয়। এই ধরনের সুযোগ দেওয়াটা খারাপ নয়। কিন্তু আপনি যারে তারে দিয়ে পোস্ট লেখালে আপনার পোস্টের মান নষ্ট হবে। এমনো হতে পারে যে, আপনার পোস্ট লেখার ধরন এক রকম এবং তার পোস্ট লেখার ধরন আরেক রকম, যেটা পাঠকরা পছন্দ করবে না। এ ধরনের লোকদের দিয়ে ব্লগে পোস্ট লেখালে ব্লগের ভিজিটর হারাতে পারেন।
৪২। ভালোমানের হোস্টিং না কেনা
ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগিং এর ক্ষেত্রে হোস্টিং বিষয়টা খুবই জরুরী। কমদামে নরমাল হোস্টিং ব্যবহার করলে ব্লগের স্পিড ভালো হবে না। সেই সাথে বিভিন্ন সময় সার্ভারে সমস্যা করতে পারে। বিশেষকরে ব্লগে অধিক ট্রাফিক থাকলে সার্ভার জনিত সমস্যায় পড়তে হবে। কাজেই হোস্টিং কেনার সময় সবকিছু জেনেশোনে হোস্টিং কিনবেন।
৪৩। ব্লগে অতিরিক্ত ছবি ব্যবহার করা
ব্লগে প্রয়োজন
অতিরিক্ত ইমেজ ব্যবহার করা ঠিক না। কারণ অতিরিক্ত ইমেজ ব্যবহার করার ফলে ব্লগের পেজ স্পিড কমে যায়। একটি বিষয় সম্পর্কে বুঝানোর জন্য যতটুকো ছবি ব্যবহার করা প্রয়োজন তার অতিরিক্ত ব্যবহার করবেন। সেই সাথে ছোট সাইজের ছবি ব্যবহার করা চেষ্টা করবেন।
৪৪। ব্লগের ডিজাইন ঘন ঘন পরিবর্তন করা
আমাদের দেশের নতুন ব্লগাররা ব্লগের আর্টিকেল এর কোয়ালিটির উপর কোন গুরুত্ব না দিয়ে শুধুমাত্র ব্লগের ডিজাইন নিয়ে পড়ে থাকে। কোথায় কি কালার দিলে ভালো, কোথায় ছবি দিলে ভালো, অমুকের ব্লগের ডিজাইন ভালো, আমারা ভালো নয়। এই সব ফালতু বিষয়ে নজর না দিয়ে আর্টিকেল লেখার প্রতি মনোযোগি হন। মানুষ আপনার ব্লগের ডিজাইন দেখতে আসবে না, আর্টিকেল পড়ার জন্য আসবে। যেকোন মিনিমাম একটি ডিজাইনের ব্লগে আর্টিকেল ভালো হলে সেই ব্লগ ভালো র্যাংক করবে। এ ক্ষেত্রে ব্লগের ডিজাইন আপনার ব্লগের র্যাংক করবে না।
৪৫। বানান ভুল করা
সার্চ ইঞ্জিন এবং পাঠকদের কোন বিষয়ে বুঝানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই কনটেন্ট এর বানান সঠিকভাবে লিখতে হবে। কারণ বানান ভূল করলে পাঠক আপনার সম্পর্কে এক ধরনের খারাপ ধারনা পোষণ করবে। সেই সাথে অতিরিক্ত বানান ভূল করলে এবং বাক্য সঠিকভাবে গঠন করতে না পারলে, সার্চ ইঞ্জিন আপনার ব্লগের পোস্টের বিষয়ে সঠিক ধারনা নিতে পারবে না। যার কারনে পোস্ট সহজে র্যাংক হবে না।
৪৬। ব্লগের স্পিড কম থাকা
ব্লগের স্পিড ভালো থাকা গুগল এর আরেকটি বড় র্যাংকিং ফ্যাক্টর। আপনার ব্লগটি স্লো গতির হলে এবং লোডিং নিতে থাকলে পাঠক আপনার পোস্ট অপেন হওয়ার জন্য অপেক্ষা করবে না। কারণ পাঠকের জন্য গুগলে অসংখ্য পোস্ট রয়েছে। স্লো গতির পোস্ট পড়ার জন্য অপেক্ষায় না থেকে অন্যকোন পোস্ট পড়ে নিবে।
৪৭। ব্লগে বেশি বিজ্ঞাপন ব্যবহা করা
নতুন যারা এডসেন্স অনুমোদন করে তারা মনেকরে ব্লগে যত বেশি জায়গাতে বিজ্ঞাপন ব্যবহার করব, ব্লগে আয় তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। আপনি নিশ্চয় জানেন যে, সাধারণ মানুষ ব্লগের কোন পোস্ট পড়ার সময় বিজ্ঞাপন দেখলে খুব বিরক্তবোধ করে। অতিরিক্ত বিজ্ঞাপন ব্যবহার করলে পাঠক আপনার ব্লগ ইগনর করবে। সেই সাথে বেশি বিজ্ঞাপন ব্যবহার করার ফলে ব্লগের স্পিড অনেকটা কমে যাবে। কজেই শুধু লাভের আশায় ব্লগের পাঠক হারালে লাভের চাইতে ক্ষতি বেশি হবে।
৪৮। পোস্ট রিভিউ না করা
বেশিরভাগ লোক একটি পোস্ট লেখার পর সেটি রিভিশন না করে সরাসরি ব্লগে পাবলিশ করে দেয়। একজন ভালো ব্লগার এটা কখনো করতে পারে না। সাধরণত একটি পোস্ট লেখার পর সেই পোস্টে বিভন্ন বানান ও বাক্য গঠনের অনেক ছোটখাটো ত্রুটি থাকে। সেগুলো পোস্ট লেখার সময় বুঝা যায় না বা চোখে ধরা পড়ে না। এ ধরনের ভুল সংশোধন করার জন্য অবশ্যই ব্লগে প্রত্যেকবার নতুন পোস্ট লেখা শেষে পোস্ট পাবলিশ করার পূর্বে ভালোভাবে পড়ে নিবেন।
৪৯। কিওয়ার্ড রিসার্চ না করা
কোন একটি পোস্ট লেখার পূর্বে
কিওয়ার্ড রিসার্চ করাটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একটি পোস্ট লেখার পূর্বে সেই কিওয়ার্ডের সাথে রিলেটেড আর কী কী কিওয়ার্ড এর প্রতি ফোকাস রেখে আর্টিকেল লিখতে হবে, সেই কিয়ার্ড সম্পর্কে ধারনা নেওয়ার জন্য কিওয়ার্ড রিসার্চ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যে পোস্ট নিয়ে লিখছেন সেই পোস্টে কি পরিমানে ইন্টারনেটে খুঁজা হয়, সেটি জানার জন্য অবশ্যই কিওয়ার্ড রিসার্চ করতে হবে।
ধরুন- আপনি কোন একটি বিষয় নিয়ে খুব ভালোভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পোস্ট লিখলেন। কিন্তু সেই বিষয়ে কেউ অনলাইনে সার্চ করে না। এ ক্ষেত্রে আপনার সম্পূর্ণ পরিশ্রম বৃথা যাবে। কারণ যে বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করা হয় না সে বিষয়ে পোস্ট লিখে আপনি ভিজিটর পাবেন না। সে জন্য যে বিষয়ে লিখবেন সে বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করা হয় কি না বা কি পরিমানে সার্চ করা হয়, সেটা জেনে নেওয়ার জন্য পোস্ট লেখার পূর্বে আপনাকে কিওয়ার্ড রিসার্চ করে নিতে হবে।
৫০। পুরাতন পোস্ট আপডেট না করা
সার্চ ইঞ্জিন সবসময় ফ্রেশ কনটেন্ট পছন্দ করে। ধরুন- আপনি ২০১৫ সালে সিলেটের জনপ্রিয় হোটেল “নির্বানা-ইন” নিয়ে একটি রিভিউ পোস্ট লিখলেন। ঠিক একইভাবে আরেকটি ব্লগ ২০২০ সালে এসে আপনার মত বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরে হোটেল “নির্বানা-ইন” নিয়ে একটি পোস্ট লিখল। এ ক্ষেত্রে আপনি নিজেই বলুন গুগল কোন পোস্টকে বেশি প্রাধান্য দেবে। স্বাভাবিক নিয়ম গুগল নতুন পোস্টকে বেশি গুরুত্ব দেবে। কারণ হোটেল “নির্বানা-ইন” এর ২০১৫ সালে যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা ছিল সেটা নিশ্চয় ২০২০ সালে এসে পরিবর্তন হয়েগেছে। এই জন্য স্বাভাবিক নিয়মে গুগল ২০২০ সালে করা নতুন পোস্টটি সার্চ র্যাংকিংয়ে উপরে রাখবে।
ঠিক একইভাবে আপনি যে বিষয়ে পোস্ট লিখছেন সেই পোস্ট পুরাতন না রেখে সময়ে সময়ে আপডেট রাখার চেষ্টা করবেন। পুরাতন পোস্ট আপডেট রাখাটা গুগল খুব বেশি পছন্দ করে। নরমালি একটি নতুন পোস্টকে র্যাংক করাতে যতটা না কষ্ট হয় একটি পুরাতন পোস্ট আপডেট করলে সেটিকে সহজে র্যাংক করানো সম্ভব হয়।
শেষ কথা
এখানে আমি একজন নতুন ব্লগারের সবচাইতে কমন ভুলগুলো তুলে ধরলাম, যেই ভুল সচরাচর করে থাকে। আমার বিশ্বাস একজন ব্লগার এই ভুলগুলো সংশোধন করে ব্লগিং করলে যে কারো জন্য ব্লগিংয়ে সফলতা পাওয়া সহজ হবে।
কেউ যদি এ ধরনের কোন ভুল করে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই যথাশিঘ্র আপনার ভুল সংশোধন করে নিবেন। সেই সাথে এগুলোর বাহিরে আর কোন ধরনের ব্লগিং Mistake থাকলে সেগুলো সম্পর্কে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা আপনার কমেন্টের ভুলগুলো আমাদের ব্লগের শেয়ার করে দেব।